Friday, 26 June 2015

পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ভাঙচুর বুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা



বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করার পর গতকাল আবাসিক হল ছাড়েন শিক্ষার্থীরা l ছবি: প্রথম আলো


পরীক্ষা পেছানোর দাবির মুখে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। এই দাবিতে গত বুধবার রাতে ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বেশ কয়েকটি ভবনে ভাঙচুর করেন।
 
২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার মধ্য দিয়ে কাল শনিবার থেকে বুয়েটে সব বর্ষের সমাপনী পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে এবং বিকেল পাঁচটার মধ্যে হলে অবস্থানরত সব ছাত্রছাত্রীকে হল ছাড়তে নির্দেশ দেয়। মাত্র আড়াই ঘণ্টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশে বিপাকে পড়তে হয়েছে কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীকে। অনেক শিক্ষার্থীই ঢাকায় বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের কাছে আশ্রয় নেন। সন্ধ্যায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্দেশ পাওয়ার পরপরই বেশির ভাগ শিক্ষার্থী হল ছেড়েছেন, তখনো কেউ কেউ হল ছাড়ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বুয়েটের একাধিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মঙ্গলবার পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ব্যাচগুলোর সবচেয়ে সিনিয়র ব্যাচের (২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থীরা এতে নেতৃত্ব দেন। তাঁরা পবিত্র রমজান মাসে পরীক্ষা না দেওয়ার দাবিতে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। একপর্যায়ে কার্যালয়ের সামনে শুয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। পরদিন বুধবার পরীক্ষা-সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি সভা করে। তবে সেখানে সিদ্ধান্ত বদলায়নি।
 
সভার সিদ্ধান্ত জানার পর বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট ম্যাচ শেষ হলে ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এলাকায় ভাঙচুর শুরু করেন। মেকানিক্যাল বিভাগের ভবন ও উপাচার্যের কার্যালয় ছাড়া প্রায় সব কটি বিভাগ ও ভবনে ভাঙচুর করা হয়। গতকাল দুপুরে বুয়েটে গিয়ে দেখা যায়, একাডেমিক এলাকায় ভাঙা কাচ ছড়িয়ে আছে। বিশেষ করে মিলনায়তন, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ভবন, পুরাতন একাডেমিক ভবন (ওএবি), মেশিনশপ—এগুলোর দরজা-জানালার কাচ বেশি ভাঙচুর করা হয়েছে।
একাধিক শিক্ষার্থীর ভাষ্য, বুধবার রাতে কিছু শিক্ষার্থী শিক্ষকদের আবাসিক এলাকার সামনে অবস্থান করে পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে স্লোগান দেন। এ সময় চকলেটবোমা বা ককটেলজাতীয় কিছু ফাটানোর শব্দও শোনা গেছে। ভাঙা কাঠ ও গাছের ডাল জোগাড় করে একাধিক স্থানে আগুন জ্বালানো হয়।
 
গতকাল রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ স্বাক্ষরিত এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘চলতি টার্মের পূর্বঘোষিত টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে ২৩ জুন একদল ছাত্রছাত্রীর উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে উপাচার্য কার্যালয়ে “জিম্মি করা”, ২৪ জুন শিক্ষকদের আবাসিক এলাকা “অবরুদ্ধ করা” এবং রাতে একাডেমিক ভবন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে এবং শিক্ষার পরিবেশ ভীষণভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।’ এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা, ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের স্বার্থে এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বিকেল পাঁচটার মধ্যে সব ছাত্রছাত্রীকে হল ছাড়তে বলা হয়।
 
যোগাযোগ করা হলে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা সাধারণত সপ্তাহে দুই দিন নেওয়া হয়। কিন্তু এবার রোজার কারণে সপ্তাহে একটি পরীক্ষা দেওয়া হয়েছিল। তারপরও কিছু শিক্ষার্থী রোজায় পরীক্ষা না দিতে চেয়ে আন্দোলনে যায়। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, যার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
বুয়েট সূত্র জানায়, উপাচার্য অধ্যাপক খালেদা ইকরাম বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন।

No comments:

Post a Comment

U.S. Agrees to Release Huawei Executive in Case That Strained Ties With China

  U.S. Agrees to Release Huawei Executive in Case That Strained Ties With China Meng Wanzhou, a senior executive of Huawei Technologies,  ou...