Thursday, 25 June 2015

হলো না বাংলাও​য়াশ


     

ট্রফিটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই। কাল শেষ ম্যাচে হারলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তা হয়ে গেল বাংলাদেশ দলের। এই সিরিজের আবিষ্কার মুস্তাফিজুরের হাতেই এটি যেন সবচেয়ে ভালো মানায়! l ছবি: শামসুল হক


বাংলাওয়াশের আকাঙ্ক্ষায় রঙিন দিনটিতে কাল অদ্ভুত বিভ্রান্তি ছড়াল সজল মেঘের দল। টসটা যখন হলো, বৃষ্টি পড়ে পড়ে। পুরো ম্যাচ হবে কি না, সন্দেহ। কিন্তু টস হয়ে যেতেই মেঘ উধাও, ফুটে উঠল আলো। আর এই বিভ্রমের মধ্যেই একটি ভ্রান্তিবিলাসও পেল বাংলাদেশকে। অনেক বৃষ্টিভেজা যে উইকেটকে কদাচিৎ সিম বোলিং-বান্ধব হতে দেখা গেছে, সেখানেই কিনা টস জিতে ফিল্ডিং! যেখানে আবার একজন পেসার কমে পেস-ব্রিগেডটা হয়ে গেছে তিনজনের!
 

রানে ভরা খটখটে উইকেট পেয়ে সান্ত্বনার জয়ের আশায় উদ্দীপ্ত ভারত চাপিয়ে দিল ৩১৭ রানের মস্ত বোঝা। ছুটতে গিয়ে মাঝপথেই বেপথু বাংলাদেশের দৌড় থামল ২৪০ রানে। ৭৭ রানে হার। প্রবল প্রতাপান্বিত ধোনির ভারতের বিপক্ষে স্কোরলাইনটাকে ৩-০ করা গেল না। প্রতিপক্ষকে টানা তিনটি সিরিজে বাংলাওয়াশ করার মহাগৌরবে ভাসা হলো না মাশরাফির দলের।
গ্যালারির গর্জন থেমে গিয়েছিল আসলে অশ্বিনের অফ স্পিনে নাসির মিডউইকেটে রায়ডুর হাতে ক্যাচ হয়ে ফিরতেই। অম্বাতি রায়ডুর অফস্পিনে মুস্তাফিজুর এলবিডব্লু হতেই গ্যালারি স্তব্ধপুরী। সেখানে আশার ফুলগুলো সব অকালমৃত।
 
ধোনিরা বিজয়ের স্মারক স্টাম্প হাতে গ্যালারির দিকে ইতিউতি তাকাচ্ছেন। হতে পারে, তাঁরা বলছেন, আমাদের একেবারেই শূন্য হাতে ফেরানো যায় না! জয়টি পেয়ে তাঁরা যেন একেকজন মুক্তপুরুষ। দূরের প্রেস বক্স থেকে মুখগুলো আসলে পড়া যায় না। নিশ্চিত করেই সেখানে বিন্দু বিন্দু ঘামের সঙ্গে মিশে ছিল তৃপ্তির আভা।
 
কিন্তু রাতের কৃত্রিম আলোয় বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা যখন সিরিজ বিজয়ের স্মারক ট্রফিটি হাতে তুলে ধরলেন, মুখটায় তৃপ্তি আর একটু মন কেমন করা আলো-ছায়ার খেলা থাকল না? ছায়াটা ৩-০ করতে না পারার অতৃপ্তি থেকে। তবে আলোটাই বেশি। সিরিজ শুরুর আগে এত বড় বাজিটা কি ধরা গিয়েছিল, ভারতকে হারিয়ে সিরিজ জয় হবে? উত্তর অবশ্যই না। ভাবাবেগ আর বাস্তবতা ভিন্ন। মাশরাফিরা কিন্তু সিরিজটা জিতল দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেই, যা দেখে ক্রিকেট পৃথিবী বাংলাদেশকে দেখছে অন্য চোখে। বলছে, এ-ই তো নতুন যুগের ক্রিকেট। এখান থেকেই নতুন এক আলো তাদের সামনের পথে এসে পড়ে। তাই পুরস্কার বিতরণীর সময় যে গুটিকতক মুগ্ধ দর্শক গ্যালারিতে অবশিষ্ট ছিল, তারা শ্রদ্ধাই জানাল মাশরাফিদের।
 
সামনে দাঁড়িয়ে পড়া পাহাড় ডিঙোতে গেলে যেমন ব্যাটিংটা করা দরকার, সেটি আসলে করা যায়নি। শুরুতেই তামিম ইকবালের ব্যাট একটা সাহস জোগায়। কিন্তু তামিম আউট হলেন সংশয়মিশ্রিত একটা এলবিডব্লু সিদ্ধান্তে। সৌম্য সরকার ও লিটন দাসের দ্বিতীয় উইকেট জুটি তারপরও ওড়াল আশার রেণু। ইনিংসের সবচেয়ে বড় ৫৪ রানের জুটিটি গড়লেন তাঁরা। মূল অবদান সৌম্যর, দুর্দান্ত ব্যাট করছিলেন। তাঁর ৩৪ বলে ৪০ রানের ইনিংসটি ডানহাতি পেসার ধবল কুলকার্নির স্লোয়ারে অশ্বিনের হাতে থামতেই আশার রেণুগুলোকেও গোনা যাচ্ছিল। এই অবস্থায় বাংলাদেশ চায় মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসানের ব্যাটের আশ্রয়। তাঁরা দুজনই সুরেশ রায়নার অফব্রেক ‘শাসন’ করতে গিয়ে আউট। মুশফিক কাট করতে গিয়ে ধোনির গ্লাভসে বন্দী ২৪ রানে। সাকিব রায়নাকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ২০ রানে ক্যাচ লং অন থেকে ছুটে আসা কুলকার্নির হাতে। এরপর সাব্বির ও নাসিরের ব্যাটেই অলৌকিক আশায় তাকিয়ে থাকতে পারত বাংলাদেশ। থেকেও ছিল একটু। সাব্বিরই এখানে মূল নায়ক। ৬টি চারে সাজানো ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৩টি রান দিল তাঁর ব্যাট। স্টুয়ার্ট বিনির স্লোয়ার অফ কাটার তাঁর স্টাম্পে কাষ্ঠল আওয়াজ তুলতেই ম্যাচ তার ভাগ্য জেনে গেছে। এরপর একটু বয়ে চলা। সেটিরও শেষ ভারতের ৩১৭ থেকে ৭৭ রান দূরে।
 
হারানোর কিছু নেই। জিতলে মুখরক্ষা বা লজ্জা এড়ানো। অনেকটাই মানসিক সুস্থিতি নিয়ে ব্যাট করল নির্ভার ভারত। রোহিত-ধাওয়ানের ৩৯ রানের ওপেনিং জুটির ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ভারত এগোল আর চারটি জুটির কল্যাণে। দ্বিতীয় উইকেটে ধাওয়ান-কোহলির ৭৫, তৃতীয় উইকেটে ধাওয়ান-ধোনির ৪৪, চতুর্থ উইকেটে ধোনি-রায়ডুর ৯৩ এবং ষষ্ঠ উইকেটে রায়না-বিনির দ্রুতলয়ে তোলা ৩৩ রান। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক-থ্রুটি দিয়েছেন সাকিব কোহলিকে বোল্ড করে। ধাওয়ানকে (৭৫ রান) ফিরিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি। অফকাটারে পুল করতে গিয়ে শূন্যে তুলে দিয়েছিলেন বাঁহাতি ওপেনার, শর্ট মিডউইকেটে সুপারম্যানের মতো লাফ দিয়ে ক্যাচটি হাতে জমিয়ে ফেলেন নাসির। মাশরাফিরই লেগ কাটারে ডিপ মিডউইকেটে মুস্তাফিজুরের অসাধারণ এক ক্যাচ ধোনি (৬৯)। এদিন মাশরাফির বোলিংয়ে এসে ভর করেছিল মুস্তাফিজের কাটার-স্লোয়ারগুলো।
 
উদার হাতে রান বিলিয়ে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নিলেন মাশরাফি। অম্বাতি রায়ডুকে দ্বিতীয় শিকার বানিয়েছেন আম্পায়ারের ‘উপহার’ পেয়ে। এই তিন উইকেটে মাশরাফি পেরিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক। টেস্টের ৭৮ আর টি-টোয়েন্টির ২৬-এর সঙ্গে কালকের ওয়ানডের ১৯৭-মোট ৩০১ উইকেট।
 
মাশরাফির মাইলফলক ছোঁয়ার দিনে দু-দুটি বিশ্বরেকর্ড করেছেন মুস্তাফিজ। প্রথম উইকেটটা নিয়েই জিম্বাবুয়ের ব্রায়ান ভিটরিকে টপকে ক্যারিয়ারের প্রথম তিন ওয়ানডে ম্যাচে সর্বোচ্চ শিকারের রেকর্ড গড়েছেন। সেটি সিরিজে বাংলাদেশের নতুন নায়কের ‘বানি’ রোহিত শর্মার উইকেট। এ নিয়ে তৃতীয়বার মুস্তাফিজের শিকার রোহিত ‘ডাবল’ শর্মা। ২১ বলে ৩৮ রান করা সুরেশ রায়না তাঁর দ্বিতীয় উইকেট। সিরিজে তাঁর উইকেট সংখ্যা ১৩, তিন ম্যাচের সিরিজে সর্বোচ্চ। মাশরাফির তিন, মুস্তাফিজের দুই আর সাকিবের এক উইকেট-ভারতের এই ছয়টি উইকেটই কাল ফেলতে পারল বাংলাদেশের বোলিং। ঘুরে দাঁড়ানো ভারতের ব্যাটিং তাই চাপিয়ে দিতে পারল ৩১৭ রানের বোঝা। ফিরে ফিরে এল গত বিশ্বকাপের নেলসন। সেখানে স্কটল্যান্ডের ৩১৯ রানের চ্যালেঞ্জ টপকে জয় এসেছিল। এবার আর এল না। লজ্জা নিবারণে মরিয়া এই ভারত স্কটল্যান্ডের চেয়ে একটু বেশিই ভালো

No comments:

Post a Comment

U.S. Agrees to Release Huawei Executive in Case That Strained Ties With China

  U.S. Agrees to Release Huawei Executive in Case That Strained Ties With China Meng Wanzhou, a senior executive of Huawei Technologies,  ou...