যা ভাবা গিয়েছিল সেটাই হল। বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে বুধবার সকালেই পরিণত হল অতি গভীর নিম্নচাপে।
সঙ্গে সঙ্গে তিন দিন এক জায়গায় আটকে থাকা নিম্নচাপটি অবশেষে নড়তে শুরু করেছে। গত তিন দিনের অবস্থান সামান্য বদলে এ দিন সকালে অতি গভীর নিম্নচাপটি কিছুটা সরে এসেছে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে। এ দিন বেলা ১০ টা নাগাদ ও অতি গভীর নিম্নচাপটি কলকাতার ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল সেটি।
আগামী দু’দিন নিম্নচাপটির অবস্থান কী হবে তার একটা পূর্বাভাসও এদিন দিতে সমর্থ হয়েছেন আবহবিদেরা। আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানাচ্ছেন, ‘‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অতি গভীর নিম্নচাপটি বাংলাদেশ উপকূল দিয়ে স্থলভূমিতে প্রবেশ করবে। তার পরে সে অভিমুখ বদল করে সরে আসবে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে। ফলে আগামী কয়েক দিন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে অতি ভারী বৃষ্টি হবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সব দফতরকেই সতর্ক করে দিয়েছি।’
তবে ওই অতিগভীর নিম্নচাপটি শেষ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিয়ে আরও ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে কী না তা নিয়ে আবহবিদদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। বিদেশি আবহাওয়া সংস্থাগুলির কয়েকটি ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, অতিগভীর নিম্নচাপটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়ে স্থলভূমিতে প্রবেশ করবে। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ উপকূলে সে ধ্বংসলীলা চালাবে বলেও বিদেশি আবহাওয়া সংস্থাগুলির কেউ কেউ সতর্কতা জারি করেছে। তবে আলিপুর আবহাওয়া অফিস এখনই তেমনটা মনে করছে না।
গোকুলবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘অতি গভীর নিম্নচাপটি উপকূলের এত কাছে রয়েছে যে সেটি শক্তি বাড়িয়ে এখন আর ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিতে পারবে না বলেই আমরা মনে করছি। তাই এখনও আমরা ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করিনি। পরিস্থিতির দিকে আমরা নজর রাখছি।’’ আগামী ২৪ ঘণ্টায় ওই অতি গভীর নিম্নচাপটির ভূমিকা কী হয় তার উপরেই দক্ষিণবঙ্গে আগামী কয়েক দিনের আবহাওয়া নির্ভর করবে। যদি অতি গভীর নিম্নচাপ আর শক্তি না বাড়ায় তবে সেটি স্থলভূমিতে ঢোকার সময় ঝড়ের গতি থাকবে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। সঙ্গে অতি ভারী বর্ষণ হবে।
তিন দিন একই স্থানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা গভীর নিম্নচাপটি শক্তি বাড়িয়ে উপকূল অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে তা এ দিন সকালের আবহাওয়া পরিস্থিতি দেখেই কিন্তু বোঝা গিয়েছে। কলকাতায় বইছে ঝোড়ো হাওয়া। মাঝে মধ্যে এক-আধ পশলা বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশ পুরো থম মেরে আছে। দিঘা, শঙ্করপুর, নামখানা, সাগর, হিঙ্গলগঞ্জে বাতাসের গতিবেগ ছিল অনেক বেশি। অতি গভীর নিম্নচাপের ফলে ইতিমধ্যেই উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু নদীবাঁধে ফাটল ধরেছে। প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। অতি গভীর নিম্নচাপটি উপকূলের দিকে এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র আরও উত্তাল হবে। তাতে নদীবাঁধগুলির অবস্থা আরও সঙ্গীন হয়ে পড়বে বলে সতর্কতা জারি করেছে হাওয়া অফিস।