কী ভাবে অপরিবর্তিত থাকে ডিএনএ? উত্তর দিয়ে এ বারের রসায়নে নোবেল
বংশগতির ধারাকে বহন করে ডিএনএ। কোষ থেকে কোষে ডিএনএ থেকে যায় অপরিবর্তিত। যা রাসায়নিক ভাবে অসম্ভব। তবে কী ভাবে তা সম্ভব হয়? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েই এ বছরের রসায়নের নোবেল শিরোপা পেলেন থমাস লিন্ডাল, পল বংশগতির ধারাকে বহন করে ডিএনএ। কোষ থেকে কোষে ডিএনএ থেকে যায় অপরিবর্তিত। যা রাসায়নিক ভাবে অসম্ভব। তবে কী ভাবে তা সম্ভব হয়? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েই এ বছরের রসায়নের নোবেল শিরোপা পেলেন থমাস লিন্ডাল, পল মোদরিচ এবং আজিজ স্যাঙ্কার।
থমাসের জন্ম সুইডেনে। এখন কাজ করছেন ব্রিটেনে। মার্কিনি পল স্বদেশেই কাজ করছেন। আর আজিজের জন্ম তুরস্কে। তবে এখন আমেরিকায় কর্মরত। তিন জনই উপরের প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন আলদা আলাদা ভাবে। তাই এ বছরের পুরস্কার সমান ভাবে ভাগ করে নেবেন তাঁরা।
মানুষের ক্ষেত্রে শুক্রাণুর ২৩টি আর ডিম্বাণুর ২৩টি ক্রোমোজোম জুড়ে মাতৃগর্ভে প্রথম কোষটিতে তৈরি হয় প্রথম ডিএনএ। তার পরে দুই, চার, আট... কোষ থেকে কোষান্তরে ডিনএনএ অধিষ্ঠান। সব মিলিয়ে গর্ভধারণের প্রথম সপ্তাহে মোট ১২৮টি কোষের ডিএনএ-কে যোগ প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ হবে। আর পূর্ণবয়স্ক মানুষের দেহের সব কোষের ডিএনএ-র মোট দৈর্ঘ্য হবে পৃথিবী থেকে সূর্য ২৫০ বার যাওয়া-আসার সমান। কিন্তু কী আশ্চর্য এই অসংখ্য কোষের প্রতিটি ডিএনএ একই রকম দেখতে! কিন্তু রসায়নের নিয়ম বলে এ অসম্ভব।
বিষয়টি নিয়ে ৬০’-এর দশক থেকেই মেতে আছেন থমাস লিন্ডাল। বিবর্তনের জন্য ডিএনএ-র পরিবর্তন হয়। কিন্তু তা তো ন’মাসে-ছ’মাসে। কিন্তু ডিএনএ-এমনিতে বিশেষ পরিবর্তিত হয় না। থমাস দেখলেন, ডিএনএ-র ক্ষয় হয়। কিন্ত তা সেরেও যায়। আর এই ক্ষয়-প্রতিরোধী ব্যবস্থাই ডিএনএ-কে অপরিবর্তি রাখে।
কী ভাবে?
ব্যাকটিরিয়ার উপরে পরীক্ষা করে থমাস দেখলেন কারণ বিশেষ ধরনের উৎসেচক। তার পরে ৩৫ বছরের দীর্ঘ গবেষণা। শুধু ব্যাকটিরিয়ার নয়, মানব শরীরেও এই ধরনের উৎসেচকের সন্ধান পেলেন থমাস। ১৯৯৬-এ গবেষণাগারে মানব শরীরের ডিএনএ-র সেই মেরামতি প্রক্রিয়ার পুনর্নিমাণ করলেন।
কিন্তু ডিএনএ-র ক্ষয় তো শুধু শরীরের ভিতরের নানা কারণ থেকেই হয় না, বাইরের প্রভাব থেকেও হয়। যেমন, অতিবেগুনি রশ্মি। আর এই প্রক্রিয়াটা নিয়েই ভাবনা চিন্তা তুরস্কের আজিজ স্যাঙ্কারের। চিকিৎসক হিসেবে শুরু করলেও, জৈব রসায়নের টানে ডাক্তারি ছেড়ে গবেষণার জন্য সোজা আমেরিকা। একটি বিষয় তাঁকে অনেক দিন ধরে ভাবাচ্ছিল। অতিবেগুনি রশ্মির মরণকামড়ের পরেও কোনও ব্যাকটিরিয়াকে নীল আলোয় রাখলে সে সেরে ওঠে। কেন এমন হয়? এর পিছনেও সেই উৎসেচকের খেলা। প্রক্রিয়াটিকে বিশদে বুঝতে সাহায্য করলেন আজিজ।
আর পল মোদরিচের কাজ ডিএনএ-র মেরামতির প্রক্রিয়াটি নিয়েই। ১৯৬৩-তে ডিএনএ-র গঠন আবিষ্কার করে সদ্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জেমন ওয়াটসন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক। সেই থেকে জীববিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার প্রভাবে ডিএনএ-র প্রতি আকর্ষণ পলের। সেই আকর্ষণ রয়েও গেল আজন্ম। পল দেখালেন কোথায় ডিএনএ-র মেরামতি দরকার তা কী ভাবে ঠিক হয়।
নোবেল কমিটির মতে, আলাদা আলাদা ভাবে এই তিন জনের কাজ কোষ নিয়ে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বাড়িয়ে দিল। জানাল, ডিএনএ-র এই মেরামতি ঠিকঠাক না হলে ক্যানসারের আশঙ্কা থেকে যায়। পাশাপাশি এঁদের কাজ জিন-ঘটিত অসুখগুলিকে আরও গভীর ভাবে বুঝতেও সাহায্য করল বলেও জানিয়েছে নোবেল কমিটি।